রাসূলের ইশারায় গাছের চলাচল | rasuler isaray gaser cholachol | islamic post

  রাসূলের ইশারায় গাছের চলাচল | rasuler isaray gaser cholachol

ইসলামিক পোস্ট

islamic post | bangla hadis 

রাসূলের ইশারায় গাছের চলাচল | islamic post | bangla hadis

গ্রামের নাম জহুন। মক্কার অদূরবর্তী একটি জনবসতি। এক নজরে মন কাড়ে যে কোনো মানুষের। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপূর্ব প্রদর্শনী। রহমান যেন নিজ হাতে বিছিয়েছেন দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ গালিচা। মাঝেমধ্যে লাল, নীল, সাদা, হলুদ বিভিন্ন ফুল ফল ও লতাগুল্মের সুনিপুণ শৈল্পিক আচড়। হৃদয়কাড়া, মনোহর সৌন্দর্যের অপূর্ব প্রদর্শনী। প্রাণময় নির্মল পরিবেশ। জীবন্ত বৃক্ষরাজির বিপুল সমাহার। প্রকৃতির উদার হাতের অকৃপণ দান ৷


চারদিকে ছড়িয়ে রয়েছে পার্থিব মুগ্ধতার যাতীয় উপাদান। এই মুগ্ধতার আকর্ষণেই তো মক্কার সম্ভ্রান্ত লোকেরা তাদের দুগ্ধপোষ্য শিশু সন্তানদের পাঠিয়ে দেয় এমন অমলিন গ্রামীণ পরিবেশে, সবুজের অকৃপণ ছোয়ায় প্রাণবন্ত হয়ে বেড়ে উঠার অনন্য প্রত্যাশায়। এখানে শিশুরা আসে দেহে মননে বেড়ে উঠে। অফুরন্ত শক্তিতে সজীব ও প্রাণময় হয়ে উঠে।


এই জহুন গ্রামেরই একটি গাছের ছায়ায় বিষণ্ন মনে বসে আছেন বিশ্বজগতের সরদার রাহমাতুল লিল আলামীন। হুযূরের মন ভার, চিন্তামগ্ন। অব্যক্ত মর্মবেদনা ভেতরে গুমরে গুমরে কাঁদছে। হুযুরের সাথে গোটা পরিবেশটাও যেন মুখরতা হারিয়ে স্তব্ধ হয়ে আছে। ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা হযরত ওমর ফারুকসহ উপস্থিত সকল সাহাবী রা.-এর ভিতরও স্তব্ধতা সংক্রমিত হয়ে আছে। নিঃশব্দ নিরবতা ভাঙার সাহস কেউ পাচ্ছে না।


হুযূরে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বসে বসে ভাবছিলেন, মক্কার মুশরিকদের অব্যাহত বিরোধিতা এবং মুসলমানদের উপর তাদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের মাত্রা প্রতিনিয়ত বেড়ে যাওয়ার কথা। মুশরিকদের এই সীমাহীন নিপীড়ন ও বর্বরতা ধৈর্যের আধার রাসূলকেও যেন অতিষ্ঠ করে তুলছে। তাঁর ধৈর্যের বাধও যেন ভেঙ্গে যেতে চায়।

আরো পড়ুন>> হাশরের ময়দানে সবচে ক্ষমতাশীল ব্যক্তি 


তিনি আকুল হয়ে ভাবেন, এই জাতিই তো আমাকে ‘আল-আমিন' বলে। তারাই তো আমাকে ‘সাদেক’ বলে। যে কোনো বিচার সালিশে, সামাজিক আচার অনুষ্ঠানে তারাই তো আমাকে সামনে রাখে। গোত্রে গোত্রে, অনিবার্য রক্তক্ষয়ী সংঘাত তো আমি বহুবার থামিয়েছি। তুচ্ছ কারণে ঢাল তলোয়ার সজ্জিত হেয় ভাতৃঘাতি লড়াইয়ে উদ্যত হীতাহীত জ্ঞানশূন্য মুখামুখি কবিলাকে কতবার নিবৃত্ত করেছি। তাদের কল্যাণের জন্য আমি কী না করেছি?


আমার জ্ঞান হওয়ার পর থেকে তো নিজের চিন্তা করিনি। সবচেয়ে বড় কল্যাণ, স্থায়ী শান্তির পথে আহ্বান করার কারণে তারাই আজ আমার শত্রু হয়ে গেল। যারা ছিলো আমার সবচেয়ে আপন তারাই আজ প্রধান দুশমন। যারা আমার গায়ে সামান্য আচড় লাগতে দেয়নি, তারাই আজ আমার প্রাণ নিতে সংঘবদ্ধ। আমাকে, আমার সাথিদেরকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে তারা আজ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এই কঠিন পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের উপায় কি?

আরো পড়ুন>> কেমন হবে হাউজে কাওছার?


জানি, আল্লাহ পথ দেখাবেন। বিপদে তো তিনিই সহায়। এই ধরনের নানান চিন্তার ছাপ তাঁর অবয়বে ভেসে উঠছিল। শুধু নিজের দুরবস্থার কথা ভেবে নয়, বরং স্বজাতি কাফির-মুশরিকদের দুর্ভাগ্যজনক পরিণতির কথা ভেবেই তিনি বেশি মর্মাহত হচ্ছিলেন।


হঠাৎ সুবিশাল স্বচ্ছ আকাশের পানে তাকিয়ে স্বগোতির মতো উচ্চারণ করলেন,

হে আমার প্রতিপালক! আসমান জমিনের রব! তুমি আমার মনের অবস্থা জানো। এমন কিছু করো যেন আমার বিষণ্ণতা কেটে যায়, শক্তি, সাহসে আমার মন ভরে উঠে। বিষণ্নতা, অসহায়ত্ব আর হতাশা যেন আমাকে কখনো কাবু করতে না পারে। কাফির মুশরিকদের ব্যাপারে আমার যেনো কোনো পরোয়া না থাকে। তারা যত কঠোর ও রুক্ষ আচরণই করুক, আমার মনে যেন কোনো ভাবান্তর সৃষ্টি না হয়। শত অত্যাচার ও নিপীড়নেও তোমার রাহে যেন অবিচল অটল থাকতে পারি।

আরো পড়ুন>> রাসূলের অবাক করা আচরণ


তারপর ঘটল সেই বিস্ময়কর ঘটনা। দেখলে তাকিয়ে থাকতে হয়, নেত্র বিস্ফোরিত হয়, শুনলে মনে বিস্ময় জাগে, বোধ-বুদ্ধি বিকল হয়ে পড়ে।


দৃষ্টিসীমার ভেতরই ছিল একটি ঘন জঙ্গল। নানান জাতের প্রচুর গাছপালায় পরিপূর্ণ যেন একটি সাজানো বাগান। রাহমাতুল লিল আলামীন দৃষ্টি ঘোরালেন সেদিকে। চোখের ইশারায় কাউকে যেন ডাকলেন। কাছে আসতে বললেন। সহসা একটি গাছ নড়ে উঠলো। সঙ্গীদের থেকে নিজেকে আলাদা করে নিল। ডালপালা লতাগুল্ম ছাড়িয়ে নিল। গা ঝাড়া দিয়ে আস্তে আস্তে চলতে শুরু করল। এগিয়ে আসতে লাগল গর্বিত ভঙ্গিতে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে।


হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পায়ের কাছে এসে তার সঞ্চালন স্তব্ধ হয়ে গেল । গতি রুদ্ধ হয়ে গেল। ভক্তি ও শ্রদ্ধায় যেন অবনত মস্তকে পদ চুম্বন করল। পরিষ্কার উচ্চারণে ঝংকৃত হলো, 'আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ!' সালামের জবাব দিয়ে তিনি গাছটিকে লক্ষ্য করে বললেন, 'তুমি তোমার পূর্বের জায়গায় ফিরে যাও।' হুকুমের সাথে সাথে স্তব্ধ গাছটির মধ্যে যেন পুনর্বার প্রাণের সঞ্চার হল। উলটা পায়ে চলতে শুরু করল বৃক্ষটি। ধীরে ধীরে তার আগের জায়গায় গিয়ে পূর্বের ন্যায় জড়াজড়ি করে দাঁড়িয়ে গেল। একান্ত বাধ্য শাগরেদের মতো ইশারা করা মাত্রই চলে আসল, আবার বলার সাথে সাথে ফিরে গেল।

আরো পড়ুন>> রাসূল সা. এর মেরাজ সফর


গাছ যে প্রাণহীন জড়বস্তু, তার যে চলার শক্তি নেই, উপস্থিত বিস্মিত ও মুগ্ধ দর্শকরা তা যেন ক্ষণিকের জন্য ভুলেই গিয়েছিলেন। কিছুক্ষণের জন্য তারা যেন এক অপার্থিব ভুবনে অন্য জগতে বিচরণ করছিলেন। অলৌকিক ঘটনা প্রবাহের অপ্রতিরুদ্ধ সম্মোহনে তারা যেনো সম্মোহিত ও বিভোর হয়ে ছিলেন। হঠাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিতৃপ্ত কণ্ঠে তাদরে সম্বিত ফিরে এল।


বাস্তবতার চৌকাঠে দাঁড়িয়ে তারা শুনলেন দ্বীপ্ত কণ্ঠের দর্পিত উচ্চারণ, আমি অবিশ্বাসী কাফির মুশরিকদের আর পরোয়া করি না। তারা যতই কষ্ট দিক, আমার সাথি-সঙ্গীদের জীবন নিয়ে খেলা করুক, আমি জানি, আল্লাহ সব সময় আমার সাথে আছেন, থাকবেন। আমার কোনো ভয় নেই। ইন্নাল্লাহা মা‘আনা।


*** ভাল লাগলে অবশ্যই লাইক, কমেন্ট, শেয়ার এবং ফলো করে আমাদের সাথে থাকুন। সওয়াবের উদ্দেশ্যে বন্ধুদের নিকট ছড়িয়ে দিন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url